Type Here to Get Search Results !

বৈশ্বিক বানিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ

বৈশ্বিক বানিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ


বৈশ্বিক বানিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ

বর্তমান বিশ্ব এক কঠিন সময় পার করছে যোদ্ধের দামাডোলে চরম অনিশ্চয়তায় বৈশ্বিক অর্থনীতি, ব্যহত হচ্ছে বিশ্ব বানিজ্য। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশও বৈশ্বিক বানিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হয়েছে।


সূচনা-প্রসঙ্গ

করোনা মহামারির রেশ না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা তৈরি করেছে। এর প্রভাবেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এক ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্য এ বৃদ্ধি, শস্য এবং খাদ্যসহ আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হারে অস্থিরতা এবং রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়াসহ নানা কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

 

যুদ্ধেরপ্রভাব

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। কোভিড-১৯ এর কারণে এমনিতেই পণ্যমূল্য বাড়ছিল। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে সেই সংকট আরও প্রকট হয়েছে। হামলার পর ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। রাশিয়ার ওপর নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। 

আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে থাকা রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করা হয়। রুশ ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন নিষেধাজ্ঞার খাঁড়ায়। ইতোমধ্যে এসব নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে। বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ধরনের সংকট ও চলছে । যুদ্ধের কারণে জাহাজের ভাড়া বেড়ে গেছে, যার প্রভাব পড়ছে আমদানিতে।

 

গম আমদানিতে প্রভাব

বাংলাদেশের মানুষ ক্যালরির জন্য ভাতের ওপর নির্ভরশীল। তবে আটা-ময়দার ওপরও ধীরে ধীরে নির্ভরশীলতা বাড়ছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর গবেষণা মতে, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে গমের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। 

দেশে বছরে গমের চাহিদা সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টন। এর মধ্যে ৩৫ লাখ টন আসছে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। এ গম প্রক্রিয়াজাত করে ময়দা, আটা, সুজিসহ বিভিন্ন উপজাত পণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য ইতোমধ্যে বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে এই মুহূর্তে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে পণ্য আমদানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

 

জ্বালানি ও ভোজ্য তেলের ওপর প্রভাব

বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে রাশিয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন দেশে তেল ও গ্যাসের সংকট তৈরি হয়েছে। বিশ্বজুড়ে তেল ও গ্যাসের দাম হু হু করে বেড়েছে। গত এক বছরে কেবল ইউরোপের বাজারেই গ্যাসের দাম বেড়েছে ৭০০%, যা বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। 

সরকারকে বেশি দামে বিশ্ববাজার থেকে এসব পণ্য কিনতে হচ্ছে। বাংলাদেশ মূলত, কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করে থাকে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে কাতার, ওমান, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে । এতে এলএনজির দাম বেড়ে গেছে। 

এক বছর আগেও খোলা বাজারে (স্পট মার্কেট) প্রতি মেট্রিক মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (MMBTU) এলএনজির মূল্য ছিল ৩ থেকে ৪ ডলার। সেটি এখন ৩৮ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ফলে সরকার এখন স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রেখেছে। এতে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

 

হাঁস-মুরগি ও গরুর খাবার

পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ভুট্টা। বিশ্ববাজারে ইউক্রেন ১৬% ভুট্টা সরবরাহ করে। ইউক্রেন থেকে ভুট্টা সরবরাহ না হওয়ায় বিশ্বজুড়ে পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (BPICC) তথ্য মতে, গত দুই বছরে পোল্ট্রি ফিডের উপাদান সয়াবিন মিলের দাম বেড়েছে ৮৮%। 

অন্য কাঁচামালের দাম বেড়েছে ১২৩% পর্যন্ত । ভুসি, ক্যাটল বুস্টার, গম ইত্যাদির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গরুকে চাহিদার তুলনায় কম খাওয়ানো হচ্ছে। এতে দুধ উৎপাদন ও পশুর মোটাতাজাকরণে প্রভাব পড়েছে। বাজারে এখন পশু ও মানুষের খাদ্য চালের দাম সমান। ফলে বাজারে গরু, মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনের ৬০% উপকরণ আমদানি করে থাকে।

 

সার আমদানিতে খরচ

বিশ্ববাজারে সিংহভাগ সার রপ্তানির ক্ষেত্রে রাশিয়া এবং বেলারুশের ভূমিকা রয়েছে। রাশিয়ার ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে সেটি বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করেছে। ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মিউরেট অব পটাশ (MOP) সারের ৬০% আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ঐ দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে মিউরেট অব পটাশ কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। এতে খরচ বেড়েছে কৃষি খাতে।

 

ডলারসংকট

আমদানি দেনা এবং বকেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ বাড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ নেই। এ কারণে বাজারে এর সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপরন্তু চাহিদা বেড়েই চলছে। যদিও করোনার পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে পণ্যের দাম আরও বাড়তে থাকে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া করোনার সময়ে 

যেসব আমদানির দেনা ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করা হয়, সেগুলোও এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। আমদানি দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে রিজার্ভও কমছে। দাম বাড়ার আশায় অনেকে এখন ডলার মজুত করছে। তাই বেশি দাম দিয়েও বাজারে খুব বেশি ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।

 

রেমিটেন্স ঘাটতি

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বড় উৎস হলো রেমিটেন্স। দেশের আমদানি দায়ের বড় একটি অংশ পূরণ করে থাকে প্রবাসীদের রেমিটেন্স। করোনাভাইরাস সৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে অর্থনীতির প্রতিটি সূচক বিধ্বস্ত হলেও চাঙ্গা ছিল দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ। কিন্তু সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই এ খাতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। 

এ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২,১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১.৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠায়, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫.১১% কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২,৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪.৭৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠায় প্রবাসীরা। 

অর্থনীতি সংশ্লিষ্টদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেশ কমে যাওয়ার ফলে হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসীরা টাকা পাঠাচ্ছেন, এরই প্রভাবে কমেছে রেমিটেন্স উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ধীর গতি, মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং ডলারের বিপরীতে তুলনামূলকভাবে টাকা ‘শক্তিশালী থাকায় প্রবাসী আয় প্রবাহ কমতে পারে।

 

বাণিজ্য ঘাটতি

২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি প্রথমবারের মতো এক অর্থবছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ানোর সুসংবাদ বিপুল আমদানির তথ্যে ম্লান হয়ে গেছে; কেননা ১১ মাসে (জুলাই-মে) বাংলাদেশে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০.৮১ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

গত অর্থবছরের একই সময়ের এই ঘাটতি ছিল ২০.৭০ বিলিয়ন ডলার । বাংলাদেশ ব্যাংক ৭ জুলাই ২০২২ তারিখে বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসের (জুলাই-মে) বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ভারসাম্যের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ১১ মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭.২৩ বিলিয়ন ডলার। 

আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল মাত্র ২.৭৮ বিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (ACU) দায় শোধের পর দুই বছরে প্রথমবার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে এতটা ঘাটতি আর দেখা যায়নি। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে এ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বাণিজ্য ঘাটতি আরও বেড়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।

 

মূল্যস্ফীতি

বিশ্বের কোনো দেশই এখন আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাইরে নেই। কোভিড-১৯ চলাকালীন উৎপাদন ব্যবস্থায় ভাটা ও সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়, যা এখনো চলমান রয়েছে। বিশ্বব্যাপী এখন বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতির চাপ ঠেকানো। এটিই এখন অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি এখন গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। যুক্তরাজ্যে খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর ফলে দেশটিতে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে গেছে।

গত ৪০ বছরের মধ্যে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার এখন সর্বোচ্চ। কেবল ইউরোপ, আমেরিকার দেশ নয়, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে মূল্যস্ফীতির জন্য বিক্ষোভ করেছে মানুষ। বিশ্ববাজারে সব খাদ্য পণ্যের দাম ৩২% পর্যন্ত বেড়েছে। এতে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশেও আমদানি ব্যয় ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চাপকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে জ্বালানি তেল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG), গম, রাসায়নিক সার, পাম অয়েল, সয়াবিন তেল, কয়লা, ভুট্টা ও চাল এ ৯ পণ্য আমদানিতে ৮.২ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হবে।

 

সংকট মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ

দেশে এখন আমদানির জন্য যে পরিমাণ অর্থ বা ডলার খরচ হচ্ছে, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে তা মিটছে না। বিশ্বে বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমদানি-রপ্তানিকে আরো গতিশীল করতে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে এবং বাংলাদেশ থেকে বেশি বেশি পণ্য আমদানির আহ্বান জানিয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য আমদানি ব্যয় হ্রাসকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। 

ডলার সংকট মোকাবিলায় দামি গাড়ি, প্রসাধনী, স্বর্ণালংকার, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য বৈদ্যুতিক সামগ্রী, পানীয়সহ ২৭ ধরনের পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে ব্যাংকঋণ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাতিল করেছে সরকার। এদিকে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনা করে ডলারের রেট বাণিজ্যিক ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। ভোজ্য তেল ও খাদ্য ঘাটতি পূরণে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। সর্বোপরি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার ও সমন্বিত সাড়াদান প্রক্রিয়া গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

প্রথমবার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে এতটা ঘাটতি আর দেখা যায়নি। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে এ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বাণিজ্য ঘাটতি আরও বেড়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।

 

মূল্যস্ফীতি

বিশ্বের কোনো দেশই এখন আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাইরে নেই। কোভিড-১৯ চলাকালীন উৎপাদন ব্যবস্থায় ভাটা ও সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়, যা এখনো চলমান রয়েছে। বিশ্বব্যাপী এখন বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতির চাপ ঠেকানো। এটিই এখন অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি এখন গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। যুক্তরাজ্যে খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর ফলে দেশটিতে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে গেছে।

গত ৪০ বছরের মধ্যে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার এখন সর্বোচ্চ। কেবল ইউরোপ, আমেরিকার দেশ নয়, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে মূল্যস্ফীতির জন্য বিক্ষোভ করেছে মানুষ। বিশ্ববাজারে সব খাদ্য পণ্যের দাম ৩২% পর্যন্ত বেড়েছে। এতে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশেও আমদানি ব্যয় ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চাপকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে জ্বালানি তেল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG), গম, রাসায়নিক সার, পাম অয়েল, সয়াবিন তেল, কয়লা, ভুট্টা ও চাল এ ৯ পণ্য আমদানিতে ৮.২ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হবে।

 

সংকট মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ

দেশে এখন আমদানির জন্য যে পরিমাণ অর্থ বা ডলার খরচ হচ্ছে, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে তা মিটছে না। বিশ্বে বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমদানি-রপ্তানিকে আরো গতিশীল করতে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে এবং বাংলাদেশ থেকে বেশি বেশি পণ্য আমদানির আহ্বান জানিয়েছে। 

বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য আমদানি ব্যয় হ্রাসকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ডলার সংকট মোকাবিলায় দামি গাড়ি, প্রসাধনী, স্বর্ণালংকার, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য বৈদ্যুতিক সামগ্রী, পানীয়সহ ২৭ ধরনের পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে ব্যাংকঋণ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাতিল করেছে সরকার। এদিকে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনা করে ডলারের রেট বাণিজ্যিক ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। ভোজ্য তেল ও খাদ্য ঘাটতি পূরণে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। সর্বোপরি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার ও সমন্বিত সাড়াদান প্রক্রিয়া গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.